কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পরকীয়ার জেরে নুসরাত নামে দেড় বছরের শিশুকন্যাকে গলাটিপে হত্যার অভিযোগে মা আয়েশা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (৭ জুন) রাত সাড়ে ১১টার দিকে পৌর শহরের জগন্নাথপুরের লক্ষ্মীপুর মধ্যপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আজ রবিবার (৮ জুন) দুপুরে নিহত শিশুটির দাদা আবুল কালাম বাদী হয়ে দুইজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভৈরব থানার ওসি খন্দকার ফুয়াদ রুহানি।অভিযুক্ত মা আয়েশা খাতুন ময়মনসিংহ জেলার ধুবাউড়া থানার চন্দ্রগুনা গ্রামের আব্দুল মান্নান মিয়ার মেয়ে ও নরসিংদী বেলাব থানার নিলক্ষীয়া গ্রামের ওমর ফারুকের স্ত্রী। এছাড়া পরকীয়া প্রেমিক আলমগীর মিয়া ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের টান কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেড় মাস আগে পরকীয়া প্রেমিক আলমগীর মিয়ার সঙ্গে পৌর শহরের জগন্নাথপুরের লক্ষ্মীপুর মধ্যপাড়া গ্রামে শাহীন কবীরের বাড়িতে ভাড়ায় উঠেন আয়েশা। ঈদুল আজহা উপলক্ষে পরকীয়া প্রেমিকাকে ভাড়া বাড়িতে রেখে আলমগীর তার নিজবাড়ি টান কৃষ্ণনগর এলাকায় যায়। সেখানে আলমগীরের প্রথমপক্ষের স্ত্রী সন্তান রয়েছে।
শনিবার রাত ৭টার দিকে মা আয়েশার বেগম চিৎকার চেঁচামেচি করে দেড় বছরের মেয়ে নুসরাতের মৃত্যুর খবর প্রতিবেশীসহ বাড়ির মালিককে জানায়। এদিকে শিশুটির অস্বাভাবিক মৃত্যু ভেবে মা আয়েশা খাতুনকে পুলিশে তুলে দেন বাড়ির মালিক শাহীন কবীর।
নিহত শিশুটির পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ৫ বছর আগে ওমর ফারুকের সঙ্গে আয়েশার বিয়ে হয়। বিয়ের পর দুই বছর তাদের সংসার ভালো চলছিল। তাদের সংসারে আলিফ নামে ৩ বছরের ছেলে ও নুসরাত নামে দেড় বছরের মেয়ে রয়েছে। ওমর ফারুক ভৈরবের পাদুকা শ্রমিক ছিল। সেই সুবাদে দুই বছর আগে ওমর ফারুক শহরের জগন্নাথপুরের লক্ষ্মীপুর এলাকায় ভাড়া থাকতো। আলমগীরও পাদুকা শ্রমিক। একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ওমর ফারুকের পরিবারের সঙ্গে আলমগীরের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে আয়েশার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। দেড় মাস আগে ৩ বছরের ছেলেকে স্বামীর বাড়িতে ফেলে রেখে আলমগীরের সঙ্গে চলে আসেন আয়েশা।
এ বিষয়ে বাড়ির মালিক শাহীন কবীর বলেন, আয়েশা খাতুন ও আলমগীর হোসেন স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ের আমার বাড়িতে ১ মাস আগে ভাড়ায় আসেন। আলমগীর বাড়ির পাশে একটি জুতার ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। আয়েশা খাতুনকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী বলে পরিচয় করিয়ে দেন আলমগীর। দেড় বছরের শিশু সন্তানটিও তার নয় বলে আমাদের অবগত করেছিলেন। ঈদের দিন শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে হঠাৎ চিৎকার করতে করতে আয়েশা বেগম বলেন তার সন্তান নেই। প্রথমে ভেবেছিলাম হারিয়ে গেছে। আমি বাড়ির পাশে আঙ্গিনায় ও ডুবায় খুঁজতে থাকি। পরে আয়েশা তার সন্তান মরে গেছে বলে আমাদের জানায়।
এদিকে শিশু নুসরাতের মৃত্যুটি আমাদের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। শিশুটিকে বিকালে হাসিখুশি দেখেছি, এমনকি অসুস্থও ছিল না। আমাদের সন্দেহ হলে থানা পুলিশকে খবর দিয়ে নিয়ে আসি। তারা এসে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে মাকে থানায় নিয়ে যায়। শিশুর মৃত্যুর পর জানতে পারি আয়েশা আলমগীরের স্ত্রী নয়।
এ বিষয়ে নিহত শিশুটির দাদা আবুল কালাম জানান, আয়েশা আমার ছেলের জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। আলমগীরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে আমার ছেলের সংসার তছনছ করে দিয়েছে। আমার ছেলেকে ছেড়ে আসার পর সেও নিখোঁজ রয়েছে। আমার ছেলে পাগল হয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। দেড় মাস আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে ভৈরব এসে পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করেন আয়েশা। পথের কাঁটা সরাতে আয়েশা ও আলমগীর আমার নাতনীকে গলা টিপে হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডে আয়েশার ভাই ও বাবা-মায়ের যোগসাজশ রয়েছে। আমি আয়েশা ও তার প্রেমিক আলমগীর, তার ভাই মোশারফ, বাবা মন্নান মিয়া ও মাকে আসামি করে মামলা করেছি। আমি আমার নাতনি হত্যাকারীর বিচার চাই। মৃত্যুর আগে আমার আর কিছু চাওয়া পাওয়ার নাই। আমি শুধু আমার নাতনি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।
এদিকে পুলিশ হেফাজতে থাকা মা আয়েশা বেগম বলেন, ১ বছর যাবৎ আলমগীরের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। আমি আমার মেয়েকে হত্যা করেছি। আমার আর বেঁচে থেকে লাভ নাই।
ভৈরব থানার ওসি খন্দকার ফুহাদ রুহানী বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করি ও মাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। যতটুকু জেনেছি অভাব অনটন, পারিবারিক কলহ ও পরকীয়া সম্পর্কের জেরে আয়েশা খাতুন তার দেড় বছরের সন্তান নুসরাতকে গলা টিপে হত্যা করেছে। প্রাথমিকভাবে শিশুটির মা হত্যার দায় স্বীকার করেছে। শিশুটির দাদা আয়েশা খাতুন ও তার পরকীয় প্রেমিক আলমগীরকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন