শোলাকিয়ায় থাকছে চার স্তরের নিরাপত্তা - দৈনিক টারমিগান |
কিশোরগঞ্জ প্রতিবেদক
২৯ মার্চ ২০২৫, ৬:০৬ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

শোলাকিয়ায় থাকছে চার স্তরের নিরাপত্তা

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে প্রতি বছর লাখ লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন। বড় জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায় এই বিশ্বাস থেকে লাখ লাখ মুসল্লি এখানে ঈদের নামাজে সমবেত হন। এবারও দেশের সবচেয়ে বড় জামাত আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সাজানো হয়েছে সব আয়োজন।

শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচলনা পর্ষদের সূত্র জানায়, শোলাকিয়ায় এবার ১৯৮তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। নামাজ শুরু হবে সকাল ১০টায়। এবার জামাতে ইমামতি করবেন মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন হয়বতনগর এইউ কামিল মাদ্রাসার প্রভাষক মাওলানা জুবায়ের ইবনে আব্দুল হাই।

নারীদের জন্য সূর্যবালা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আলাদা জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রায় সাত একর আয়তনের ঈদগাহের মূল মাঠে ২০৬টি কাতার রয়েছে। প্রতিটি কাতারে ৭০০-৮০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করার সুযোগ পাবেন। মূল মাঠের পাশে রাস্তা ও বাসা-বাড়ির ছাদ, পুকুর পাড়, ব্রিজে আরও মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।

জামাতকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে মাঠের দাগ কাটা, মেহরাব ও দেয়ালে চুনকাম করা, ওজুখানা তৈরি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ ঈদ জামাতের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নিরাপত্তার স্বার্থে মাঠের ভেতরে ৬৪টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এ ছাড়াও ৬টি ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে মাঠের মুসল্লিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মাঠের রঙ করার দায়িত্বে থাকা শহীদ মিয়া বলেন, প্রতি বছর আমি মাঠে রঙের কাজ করি। এবারও করেছি। মোট ১৫ জন মিলে কাজটি সম্পন্ন করেছি। খুব ভালো লাগে, মনের আনন্দে কাজটি করে থাকি। মসজিদ, মাঠের দেয়াল, গেট, গাছের গোড়া, মাইকের পিলার এগুলো রঙ করতে হয়।

৬৫ বছরের বৃদ্ধ মোস্তফা মিয়া বলেন, আমি ছোটকাল থেকে এই মাঠে নামাজ আদায় করে থাকি। এ বছর পুরনো ইমাম সাইফুল্লাহ হুজুর নামাজ পড়াবে। তার বাবাও এই মাঠে নামাজ পড়াতেন। খুব ভালো লাগছে। গত ১৫ বছর অনেকেই নামাজ পড়িয়েছে, এতে সমস্যাও হয়েছে। মুসল্লির সংখ্যাও কমে গিয়েছিল। এবার আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ হবে।

মো. মনিরুজ্জামান বলেন, দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মনের মধ্যে আনন্দে সবাই মিলে একসঙ্গে ঈদ করব। এখানে অনেক মানুষের সমাগম হয়। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে আসেন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করব আমাদের জন্য, দেশের জন্য যেন আল্লাহ শান্তি বয়ে আনেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মনোয়ার হোসাইন রণি বলেন, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ১৫ দিন আগে থেকেই মাঠের সাজসজ্জা করা হয়ে থাকে। দেখে বোঝা যাচ্ছে প্রতিবারের মতো এবারও মাঠে আগত মুসল্লিদের জন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। ঐতিহাসিক দিক পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০০ বছর আগে থেকেই এখানে নামাজ আদায় করা হয়। ইতিহাস ঐতিহ্য অল্পদিনে তৈরি হয় না। শত শত বছর ধরে নামাজ আদায় করার ফলে আজ ঐতিহাসিক স্বীকৃতি পেয়েছে শোলাকিয়া ঈদগাহ। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার পর থেকে শোলাকিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত ও কঠোর করা হয়েছে। পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। নিরাপত্তায় ড্রোন ক্যামেরাসহ পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার, আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর ও পুলিশের চেকপোস্ট। নামাজের সময় ১১শ পুলিশ সদস্য, ৫ প্লাটুন বিজিবি ও র‌্যাব সদস্য ছাড়াও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও আনসার সদস্যরা মাঠ ও মাঠের বাইরে মোতায়েন থাকবেন।

সাদা পোশাকে নজরদারি করবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। থাকবে ফায়ার ব্রিগেড, অ্যাম্বুলেন্স, মেডিকেল টিম ও পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম। ঢাকা থেকে আসবে বোম ডিসপোজাল ইউনিট। প্রতিটি মানুষ যখন ঈদগাহ ময়দানে আসবেন পুলিশের চারটি স্থাপনা পেরিয়ে আসতে হবে। সেটি চেকপোস্ট হোক বা পিকেট হোক। আবার কোথাও কোথাও পাঁচ থেকে ছয়টি স্থাপনা পেরিয়ে ময়দানে আসতে হবে।

শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে দুটি বিশেষ ট্রেন কিশোরগঞ্জে আসবে। ভৈরব-কিশোরগঞ্জ (স্পেশাল) নামের ট্রেনটি ভৈরব স্টেশন থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে আসবে। ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ (স্পেশাল) নামের অপর ট্রেনটি সকাল ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে ছাড়বে। নামাজ শেষে দুপুর ১২টায় এসব ট্রেন কিশোরগঞ্জ স্টেশন থেকে ফিরে যাবে। এ ছাড়াও, মুসল্লিদের অজু ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা, মেডিকেল টিম, নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।

নিরাপত্তার স্বার্থে ঈদের জামাতে কেবল জায়নামাজ ও মোবাইল নিয়ে মাঠে প্রবেশের অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ছাতা, ব্যাগ, লাঠি কিংবা লাইটার জাতীয় কিছু নিয়ে মাঠে না আসা ভালো। এ ছাড়াও ঈদের আগের দিন থেকে দেশের বহু জেলা থেকে লোকজন শোলাকিয়ায় আসতে শুরু করেন। তাদের আবাসন ও আপ্যায়নের ব্যবস্থা পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে করা হয়।

উল্লেখ্য, রেওয়াজ অনুযায়ী শোলাকিয়ায় বন্দুকের গুলি ফুটিয়ে ঈদ জামাত শুরুর সংকেত দেওয়া হয়। জামাত শুরুর ১৫ মিনিট আগে তিনটি, ১০ মিনিট আগে দুটি এবং পাঁচ মিনিট আগে একটি শটগানের গুলি ফোটানো হয়।

 

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমরা দেশের গর্ব, আমাদের নামে লিখবে কেন?

লৌহজংয়ে বিএনপি কর্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর  করলেন আওয়ামীলীগ নেতা

গজারিয়ায় ২শত পিছ ইয়াবা সহ স্বামী স্ত্রী আটক

১০৪৮৭ জনের হজযাত্রা নিয়ে শঙ্কা

শেখ হাসিনার প্রত্যাবাসন নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে

ট্রলারসহ ১১ জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে গেল আরাকান আর্মি

মেয়ে ও মেয়ের জামাতার প্রতারণায় নিঃস্ব প্রবাসী দম্পতি

টঙ্গিবাড়ীতে মাসিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

‘দুই-এক মাসের মধ্যে শুরু হতে পারে মুন্সীগঞ্জে মেডিকেল কলেজের কাজ’

তুরিন আফরোজের মোবাইল-ল্যাপটপে মিলেছে সরকারবিরোধী তথ্য: পুলিশ

১০

গাজাবাসীর ডাকা হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভে উত্তাল বাংলাদেশ

১১

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ গ্রেফতার

১২

টঙ্গীবাড়িতে মাটি কাটা বন্ধ করল এসিল্যান্ড

১৩

মুন্সীগঞ্জে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হবে – স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম

১৪

টঙ্গীবাড়ীতে শালিশে হেরে প্রতিপক্ষের উপর হামলা, আহত ৪

১৫

ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে দেশে দেশে বিক্ষোভ

১৬

ভেষজ ওষুধ খাইয়ে ভাড়াটিয়াকে ধর্ষণের অভিযোগ

১৭

জিডি করতে ৩ প্যাকেট সিগারেট নিলেন এএসআই

১৮

দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এলো মার্চে

১৯

গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বৈশ্বিক ধর্মঘটের আহ্বান

২০